মঙ্গলবার, নভেম্বর ৪, ২০২৫

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহুল পঠিত “দেবদাস”উপন্যাসের পাঠ আলোচনা

📖 বইয়ের নাম: দেবদাস

✍️ লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

🗓️ প্রথম প্রকাশ: ১৯১৭

📚 ঘরানা: ট্র্যাজেডি, প্রেম, সামাজিক বাস্তবতা

🔍 সারাংশ:

‘দেবদাস’ বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী প্রেমগাঁথা। এটি মূলত দেবদাস, পার্বতী (পারো) ও চন্দ্রমুখী — এই তিনটি চরিত্রের মধ্যকার এক জটিল মানসিক ও সামাজিক টানাপোড়েনের গল্প। দেবদাস এবং পার্বতী ছোটবেলার বন্ধু, কিন্তু উচ্চ-নীচ সামাজিক শ্রেণিবিভাজনের কারণে তাদের প্রেম পরিণত হতে পারে না। আহত আত্মসম্মান ও অনুশোচনায় দেবদাস ধীরে ধীরে আত্মধ্বংসের পথে হাঁটে এবং এক সময় তার জীবনে আসে চন্দ্রমুখী – এক দয়ালু নারীকন্যা, যিনি দেবদাসকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসে, কিন্তু তাও দেবদাস ফিরতে পারে না নিজের অতীত এবং আত্মপ্রবঞ্চনার গহ্বর থেকে।পলিমাটি

🧠 বিশ্লেষণ ও সমালোচনা:

ভালো দিকসমূহ:

ভাষার আবেগ ও সরলতা:
শরৎচন্দ্রের সহজ অথচ গভীর গদ্য ভাষা পাঠককে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার অনুভূতি দেয়। সংলাপগুলো সংযত, কিন্তু আবেগে পূর্ণ।

চরিত্রের বাস্তবতা ও মনস্তত্ত্ব:
দেবদাসের আত্মদ্বন্দ্ব, পারো’র আত্মমর্যাদা, চন্দ্রমুখীর আত্মত্যাগ — প্রতিটি চরিত্র জটিল ও মানবিক। তারা নিখুঁত নয়, কিন্তু তাই আরও জীবন্ত।

সমাজের কঠোরতা ও শ্রেণি বিভাজন:
উপন্যাসটি তৎকালীন সমাজের পিতৃতান্ত্রিকতা, কুসংস্কার এবং উচ্চবর্ণের ভণ্ডামির এক নির্মম চিত্র।

সমাপ্তির গা ছমছমে ট্র্যাজেডি:
দেবদাসের মৃত্যু যেন নিজের সৃষ্ট নিয়তির কাছে এক চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ, যা পাঠককে কাঁদিয়ে তোলে।

সমালোচনার জায়গা:

দেবদাস চরিত্রের দুর্বলতা:
দেবদাস অনেক পাঠকের কাছে নায়ক হলেও তার সিদ্ধান্তহীনতা, অহংকার, এবং আত্মধ্বংস প্রবণতা মাঝে মাঝে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।

নারী চরিত্রের আত্মবিলোপ:
পার্বতী ও চন্দ্রমুখী — উভয়ই এক অর্থে দেবদাসের চারপাশেই আবর্তিত। যদিও তারা দৃঢ় ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, তবুও তাদের আত্মবিকাশের সুযোগ কম।

🌟 বিশেষত্ব:

‘দেবদাস’ কেবল প্রেমের গল্প নয়, এটি এক অসংখ্য “না বলা” কথার উপাখ্যান — শ্রেণি বৈষম্য, সমাজিক চাপ, অভিমান, আর আত্মপ্রবঞ্চনায় গড়া এক অতল বিষণ্নতা। একে একধরনের উপমহাদেশীয় রোমান্টিক ট্র্যাজেডি বলা চলে।

🔚 উপসংহার:

‘দেবদাস’ আজও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সবচেয়ে আলোচিত প্রেমের উপন্যাস। সময় বদলালেও দেবদাসের আত্মকেন্দ্রিকতা, পারোর আত্মমর্যাদা এবং চন্দ্রমুখীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাঠকের মনে গভীর ছাপ ফেলে। এটি প্রেমের না-পাওয়া দিকটিকে এমন এক স্থায়ী রূপ দিয়েছে যা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

📈 রেটিং: ★★★★☆ (৪.৫/৫)

পাঠপ্রতিক্রিয়া:
তুমি যদি এমন এক প্রেম কাহিনী পড়তে চাও যেখানে চরিত্রেরা নিখুঁত নয়, তবুও হৃদয়ের গভীরে স্থায়ী হয়ে থাকে—তবে ‘দেবদাস’ অবশ্যপাঠ্য।

অচিন পাঠক

লেখক পরিচিতি

আরও লেখা

spot_img

সাম্প্রতিক লেখা