মাধ্যমিকে থাকাকালীন সময়ে পল্লীকবি ‘জসীম উদ্দীন’ এর পল্লীজননী কবিতা মনে ধরেছিল খুব। একজন অসুস্থ সন্তানের সুস্থতার জন্য মায়ের মনের অবস্থা কতটা মায়া দিয়ে কতটা আবেগ দিয়ে ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় তখন দেখেছিলাম। আবার কবির সেই বিখ্যাত বিরহের কবিতা ‘কবর’ এর সেই পরিচিত লাইন-
এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এই লাইনদুটি শুনলে অনেক পাঠকই বলে দিতে পারবেন এটা কোন কবিতার অংশ।
ব্যক্তিগতভাবে আমি কবিতা খুব একটা পড়িনা। ঐ স্কুল কলেজে থাকাকালীন যা পড়েছি তবে সেই পড়াটাও সত্যি বলতে ভেতর থেকে নয়। খাতায় বা পরীক্ষায় একটু বেশি মার্ক পাওয়ার আশায় পড়েছিলাম। লেখক পরিচিতিও গোগ্রাসে মুখস্ত করতে হয়েছে। সেই লেখক পরিচিতিতেই পরিচিত হয়েছিলাম তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ সম্পর্কে। তবে ঐযে বললাম কবিতায় খুব একটা আগ্রহ ছিলনা আমার সেই স্কুলজীবনের পর থেকেই। কিছুদিন আগে কি মনে করে যেন আমার সেই লেখক পরিচিতিতে পড়া ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থের কথা মনে পড়লো। বইটা কদিন আগে সংগ্রহ করলাম এবং তারপরে পড়া শুরু করলাম।
সত্যি বলতে এটাকে কাব্যগ্রন্থ বলা যাবেনা এটা কাব্যগল্প। পড়া শুরু করার পর বেশ কিছু জায়গায় মাঝেমধ্যে হোচট খেয়েছি যদিও কিন্তু একসময় গিয়ে সেটা ঠিক হয়ে গিয়েছে। তবে বিষয় হচ্ছে ছন্দে ছন্দে কি শক্তিশালী লেখা। কাহিনী গ্রাম্য দুটি ছেলেমেয়ের প্রেমের কাহিনী কিন্তু তাতে এত আবেগ এত ভালোবাসা মেশানো তা হয়ত এটা না পড়লে বোঝা যাবেনা। শুধু যে দুজন ছেলেমেয়ের ভালোবাসার কথা বলা আছে তা নয় তাদের মায়েরাও যে তাদের কতটা ভালোবাসেন তাও উঠে এসেছে কবিতায়। ঠিক যেন গ্রামের সেই নক্সী কাঁথায় ফুটে ওঠা জীবনের গল্প। কিন্তু আমি পুরো কবিতায় কিছু জিনিস খুজছিলাম সেটা হলো ‘পল্লীজননী’ কবিতার মত স্নেহ,মায়া,ভালোবাসা আর লেখক যেন শেষদিকে এসে আমার সেই খুজতে থাকা জিনিসগুলো মুক্তার মত ছড়িয়ে দিলেন কবিতায়।
অতঃপর বইটা শেষ করে বুঝলাম কেন এটার নাম ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ আর কেন এটা এত পাঠকপ্রিয় আর কেন লেখককে পল্লীকবি বলা হয়।
বই: নক্সী কাঁথার মাঠ
লেখক: জসীম উদ্দীন
প্রকাশনী: পলাশ প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্য: ২২০


