বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫

সিনেমা রিভিউ: উৎসব (২০২৫)

🎬সিনেমা রিভিউ: উৎসব (২০২৫)

🎥 পরিচালনা: তানিম নূর
👤 অভিনয়ে: জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম, সৌম্য জ্যোতি, সাদিয়া আয়মান
🗓️ মুক্তি: ঈদ-উল-আজহা ২০২৫
🎭 ধরন: ড্রামা, রূপক, সামাজিক রূপান্তর
📍 দর্শনীয় মূল কথা: “উৎসব কেবল আনন্দ নয়, আত্মজিজ্ঞাসারও সময়।”

গল্পের সংক্ষেপ:

‘উৎসব’ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ঈদের প্রাক্কালে ঘটে যাওয়া এক গভীর আত্মউন্মোচনের গল্প।
মূল চরিত্র জাহাঙ্গীর (জাহিদ হাসান) — একজন গোঁড়া, আত্মকেন্দ্রিক, দায়িত্ববিমুখ ব্যক্তি, যার কাছে সম্পর্ক বা আবেগ নয় — অর্থই মুখ্য।
কিন্তু ঈদের রাতে তার জীবনে প্রবেশ করে তিনটি ‘ভূত’ — যারা তাকে নিয়ে যায় তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জীবনের ভেতর।
এই অদ্ভুত সফর তাকে বদলে দেয়…
তা-ও কি স্থায়ীভাবে !

পলিমাটি

🎭 অভিনয় বিশ্লেষণ:

জাহিদ হাসান (জাহাঙ্গীর):

দর্শক বহুদিন পর পেলেন এমন একটি চরিত্র, যা বহুমাত্রিক — কখনো কর্কশ, কখনো করুণ, কখনো হাস্যকর আবার কখনো অসহায়।
তিনি চাহনি, সংলাপ এবং নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়ায় যে আবেগ প্রকাশ করেন — তা বাংলা সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পারফরম্যান্সের তালিকায় থাকবে।

👻 তিন ভুত:

চঞ্চল চৌধুরী (ভবিষ্যতের আত্মা): গম্ভীর ও বিষণ্ন চোখে সময়ের করুণ ভবিষ্যত দেখান।

জয়া আহসান (বর্তমান): তার সাবলীল সংলাপ, দার্শনিক ব্যঞ্জনা ও স্মিত হাসিতে জাহাঙ্গীরের অহং বিনষ্ট হয়।

অপি করিম (অতীত): আবেগে পরিপূর্ণ; স্মৃতির দরজায় ধাক্কা দেন হৃদয়ের একান্ত কোণে।

👧 সাদিয়া আয়মান (জেসমিন):

সংসারের ব্যস্ততা, অভিমান আর মানবিকতার টানাপোড়েনে একজন নারীর ভূমিকায় অনবদ্য।

🎥 নির্দেশনা ও নির্মাণ:

তানিম নূর একজন দক্ষ কারিগর — তিনি ‘উৎসব’কে বানিয়েছেন চলচ্চিত্র ও নাট্যরীতির মাঝামাঝি এক আবেগঘন ভাষায়।
তার ক্যামেরার ভাষা বলে,
সংলাপ বলে না — চরিত্র বলে।
উৎসবের রঙ, কোরবানির ছায়া, রাতের নিঃশব্দতা, শিশুর হাসি — সবকিছু এক বিশাল ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে।

🎼 সঙ্গীত ও আবহ:

🎵 আর্টসেল-এর ‘ধূসর সময়’, লেভেল ফাইভের ‘তুমি’, আর রবীন্দ্র সংগীতের নান্দনিক ব্যবহারে প্রতিটি দৃশ্য যেন হৃদয়ের তারে দোলা দেয়।
শব্দ, নিঃশব্দতা, ছায়া ও সুরের সমন্বয়ে এক মোহময় অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়েছে।

🖼️ দৃশ্যগঠন ও সিনেমাটোগ্রাফি:

রাসেদ জামানের চিত্রগ্রহণ এই ছবির অন্যতম শক্তি।ভোরের আলোয় একা জাহাঙ্গীরের দাঁড়িয়ে থাকা ও ঈদের নামাজের ভিড়ে তার নিঃসঙ্গতা এবং তিনটি সময়ের তিনটি আলাদা রঙ সবই একটি ‘ভিজ্যুয়াল কবিতা’।

🧩 মূল থিম ও দর্শন:

‘উৎসব’ সিনেমাটি কেবল পারিবারিক সম্পর্কের গল্প নয় — এটি সময়, পাপ, ক্ষমা ও রূপান্তরের গল্প।
জাহাঙ্গীর আমাদের সমাজের প্রতীক, যিনি দায়িত্ব এড়াতে চান কিন্তু সময় তাঁকে পালাতে দেয় না।
প্রতিটি ‘ভূত’ তার মানসিক গ্লানিরই এক রূপ — যা এই সমাজের হাজারো মানুষের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

📉 দুর্বলতা (যা চোখে পড়তে পারে):

কিছু সংলাপ খানিকটা উপদেশমূলক মনে হতে পারে।ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ কিছুটা কম স্পষ্ট ছিল; আরও গভীর হতে পারতো।

সংক্ষেপে ভালোবাসার কারণ:

🔸 আত্মিক রূপান্তরের গল্প
🔸 আবেগঘন, বাস্তব চরিত্র
🔸 জাহিদ হাসানের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়
🔸 ঈদের অর্থবোধ নিয়ে নতুন ভাবনা

রেটিং: ৯.৩/১০

“উৎসব এমন এক সিনেমা, যা দেখার পর আপনি আর আগের মতো থাকবেন না।”

📢 শেষ কথা:

‘উৎসব’ আমাদের জন্য একটা আয়না — যেখানে ঈদের আনন্দ আর আত্মসমালোচনার একসাথে সহাবস্থান ঘটে।
এটি ঈদের আনন্দের বাইরেও এক অনুরণনের গল্প — যেখানে ভালোবাসা, অনুতাপ, পারিবারিক দায়িত্ব এবং সময় — সবকিছু মিলিয়ে গড়ে ওঠে এক অনন্য ‘উৎসব’।

লেখক পরিচিতি

পংকজ পাল
পংকজ পাল
তরুণ গল্পকার ও কবির জন্ম ১৫ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলায় ৷ বি.এস.সি (অনার্স), এম.এস.সি ; এল.এল.বি; শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন ৷ তার প্রকাশিত একক গ্রন্থ দুইটি ৷ কাব্যগ্রন্থ-'নিঃসঙ্গতার মেঘমালা' ও গল্পগ্রন্থ-'আকাশের নীল রং' এবং যৌথগ্রন্থ-চল্লিশের বেশি ৷ জেলার উদীচী, প্রগতি লেখক সংঘ, খেলাঘর, প্রথম আলো বন্ধুসভা, উত্তরণসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন ৷ বর্তমানে সম্পাদনা করছেন-'পলিমাটি','অন্তরঙ্গ 'ও 'চিন্ময়ী'৷ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে জেলা পর্যায়ে আয়োজিত ৩১তম বিজ্ঞান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সপ্তাহ ২০০৯-১০ খ্রিস্টাব্দে সিনিয়র গ্রুপে প্রথম স্থান, কবিতা সংসদ সাহিত্য পদক-২০১৪, বাংলাদেশের লেখক-'লেখক ডিরেক্টরি'র অন্তর্ভূক্ত-২০১৪, কাব্য চন্দ্রিকা একাডেমি পদক-২০১৭, লিখিয়ে কাব্য সাহিত্য সম্মাননা-২০১৮, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন স্মারক-২০১৮, কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি স্মারক ও সম্মাননা-২০২২ পেয়েছেন ৷ মেইল : pankajprenoy@gmail.com/ paulpankaj864@gmail.com

আরও লেখা

spot_img

সাম্প্রতিক লেখা