ষোড়শ শতকে মোঘল সম্রাট আকবরের আমলেই বর্তমান বাংলা বর্ষপঞ্জি তৈরি করা হয় প্রধানত ফসল রোপণ আর কর আদায় সহজ করার উদ্দেশ্যেই।হিজরীতে সহজ ছিলো না বলেই বাংলা নববর্ষের এই উদযাপন এখন বাঙালির জাতীয় জীবনে সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক।
বাংলাদেশে প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়।যার মধ্যে ঢাকার চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যতম।
ইউনেস্কো কর্তৃক এই ★মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬)★ জামদানি বুনন সহ বাংলাদেশের ★বাউল সঙ্গীতকে (২০০৮) বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আমাদের জন্য গৌরবজনক।
মঙ্গল শোভাযাত্রা কোন নির্দিষ্ট ধর্মের বা গোষ্ঠীর অন্তর্গত নয় অথচ একে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মত বা মতালম্বীদের বিতর্ক দেখতে পাই।
বাঙালির জীবন যাপনের সাথে অশুভ শক্তির প্রতিরোধে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার একাত্মতা আছে বলেই দল মতের উর্ধ্বে সকল বাঙালি একত্রিত হয়েই এই বর্ষবরণ উৎসব জাতীয় ভাবেই উদযাপন করা হয়। কিছু পণ্ডিত (তথাকথিত) এই মঙ্গল শোভাযাত্রার অপব্যাখ্যা দিয়ে খামখা উস্কানিমূলক বিতর্কের সৃষ্টি করছেন; যা বাঙালিয়ানার ওপর চরম আঘাত বলেই মনে করি।
এখন কথা হচ্ছে – কারা এর বিরোধিতা করছে?
মনে রাখতে হবে, আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য গৌরবোজ্জ্বল এবং ৫২ থেকে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই সময়কালে সবাই কি আমরা স্বাধীনতাকামী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলাম? কেন স্বাধীন বাংলাদেশে একদল বিপথগামী কুচক্রীর হাতে জাতির পিতা খুন হলো? ‘৭৪ এর পর সেই পটভূমি পর্যালোচনা করলেই আমরা বুঝতে পারি – এখনো সক্রিয় সেই সব স্বার্থান্বেষী বা মধ্যস্বত্বভোগী, যাদের ডালপালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে!
আমরা কোমলমতি বাঙালি। বিশ্বাস আমাদের আকাশ ছোঁয়ার মূলমন্ত্র। বিভাজন আর বিভেদে সেই বিশ্বাস কে দলিত মথিত করতে পারলেই ওদের মিশন সাকসেসফুল! তাই যারা প্রগতিশীল সংস্কৃতিমনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পটভুমিতে বিশ্বাস করি; তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়েই এই অপশক্তিকে রোধ করতে হবে।
তাই, বাঙালি চেতনায় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখতেই মঙ্গল শোভাযাত্রা বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন জাতীয় জীবনে জরুরি হয়ে পড়েছে।


