অপেক্ষা
গ্রামের শেষে নদীর পাড়ে ছায়া সুনিবিড় এক পুরোনো বাড়ি। গাছে গাছে পাখিরা খেলা করে আর উঠোনে ভোরের আলো নামে। সেখানেই থাকতো কলেজ পড়ুয়া প্রিয়ন্তি। সে ছিল গ্রামের সবচেয়ে ভদ্র সহজ সরল মেয়ে। বেশি কথা বলতো না, কিন্তু চোখে ছিল হাজার গল্প।
প্রিয়ন্তি প্রায়ই বিকেল বেলা বাড়ির সামনের গাছটার ডালে বসে শখের ছবি আঁকতো ৷ সাথে থাকতো তার প্রিয় বিড়াল পুষি ৷ মাঝে মাঝে নদীর ধারে হাঁটতে যেত। তার হাতে থাকতো একটা স্কেচবুক আর ছোট্ট এক পেন্সিল। সে নদীর ঢেউ আঁকতো,গাছের ছায়া আঁকতো, একদিন হঠাৎ আঁকাআঁকির সময় একটা মুখও আঁকা হলো —সৌরভের মুখ।
সৌরভ মাস্টার্স শেষ করা গ্রামের একজন সৃষ্টিশীল তরুন ৷ খুব ভালো ছেলে ৷ গ্রামের সবাই তাকে পছন্দ করে ৷ প্রিয়ন্তির বাড়ির সবাই তাকে ভালো ছেলে আর মেধাবী বলে পছন্দ করে ৷ প্রিয়ন্তির পড়ালেখার বিষয়ে সে টুকটাক সাহায্য করে ৷ অনুপ্রেরণা দেয় ৷
এক সময় তার জীবনে সৌরভ ছড়াতে সে ফুলের মতো এসেছিল — হঠাৎ, নরম, আর অস্থায়ী। সম্পর্ক রানিং থাকার সময়ে সে বলেছিল,—“একদিন একটা কর্মসংস্থান হলেই শহর থেকে ফিরে আসব। তোমার আঁকা ছবির পাশে বসে তোমার হাতে চা খাব।”
প্রিয়ন্তি হেসে বলেছিল,—“আমি অপেক্ষা করব। তবে ফিরতে দেরি কোরো না, সময়টা সহজ নয়।”
সৌরভ চলে যায়। দিন কেটে যায়, ছবি আঁকার পাতাগুলো ভরে ওঠে, কিন্তু অপেক্ষার জায়গাটা ফাঁকাই থাকে।
প্রিয়ন্তির স্কেচবুক শেষের দিকে ৷ একদিন শেষ পাতায় একটা পুরোনো শুকনো ফুল পায়। তার নিচে লেখা —
“প্রিয়ন্তি, যদি ফিরে আসি এক ঝিরঝিরে সকালে, আমায় চিনে নিও। আমি রোদে পোড়া হলেও, তোমার অপেক্ষার ছায়া হবো।”
সেই থেকে প্রতিদিন প্রিয়ন্তি নদীর ধারে গিয়ে বসে। পেন্সিল হাতে রাখে,কিন্তু ছবি আঁকে না। কারণ সে জানে, কিছু ছবি শুধু অপেক্ষায় আঁকা হয়।


