বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫

নাটক ও নাট্যকলা: পর্ব-০২

পর্ব:০২

নাটক

নাটক (ড্রামা) হলো থিয়েটারের একটি শাখা যেখানে বাচন (স্পীচ) বা বাচনভঙ্গিই প্রধান। এই স্পীচ আগে থেকেই লিখে নেয়া হতে পারে। অথবা অভিনেতারা অভিনয়ের সময় তাৎক্ষণিকভাবেও রচনা করতে পারেন। নাটকের চিরায়ত রূপ আজও পরিবেশিত হয়। এই চিরায়ত রূপ পাওয়া যায় গ্রিক ও রোমান নাটকে, ক্ল্যাসিক ইংরেজি নাটকে, উইলিয়াম শেকসপিয়র ও ক্রিস্টোফার মার্লোর কিছু উল্লেখযোগ্য রচনায় এবং ফরাসি নাটকে। উদাহরণস্বরূপ ফরাসী নাট্যকার মঁলিয়ের এর কিছু রচনার কথা উল্লেখ করা যায়।

সঙ্গীতধর্মী মঞ্চনাটক

পলিমাটি

যক্ষগণ ভারতের একটি সঙ্গীতধর্মী নাটক 

সঙ্গীতশাস্ত্র ও মঞ্চনাটকের মধ্যে সবসময়ই একটি নিকট সম্পর্ক ছিলো। সঙ্গীতধর্মী মঞ্চনাটক হলো এমন এক ধরনের মঞ্চনাটক যা সুর, গান, নাচ এবং সংলাপকে সম্মিলিতভাবে পরিবেশন করে। আধুনিক সঙ্গীতধর্মী মঞ্চনাটক উদ্ভূত হয়েছে উনিশ শতকের শেষ দিকের এবং বিশ শতকের প্রথম দিকের নাট্যধর্মী বিনোদনের দুইটি প্রকার থেকে। এ দুইটি প্রকার হলো ভদেভিল (vaudeville) এবং মিউজিক হল। এই ধরনের মঞ্চনাটক জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনীও করে থাকে। যেমন, সমকালীন ব্রডওয়ে মিউজিকল প্রায়ই মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে অপর্যাপ্ত পোশাক ও মঞ্চনাটক সজ্জা ব্যবহার করে।

কমেডি

গল্প বা বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে হাস্যরস ব্যবহার করে থাকে যে মঞ্চনাটক প্রোডাকশন, তাকে বলা হয় কমেডি। আর যে সমস্ত থিয়েটার পরিবেশনা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে হতাশাজনক, বিতর্কিত, ধর্মে ও লোকাঁচারে অনুচ্চার্য অথবা নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু হাস্যরসাত্মকভাবে প্রকাশ করে তাকে বলে ব্ল্যাক কমেডি।

 সম্পর্কিত দর্শনশাস্ত্র

একটি নাটক সৃষ্টির অনেকরকম তত্ত্ব, নাট্যসম্বন্ধীয় দৃষ্টিকোণ এবং শৈল্পিক প্রক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটার সাথে সংযোগ আছে রাজনৈতিক অথবা আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার, আবার কোনো কোনো তত্ত্ব বা প্রক্রিয়ার ভিত্তি সম্পূর্ণরূপে শিল্পসম্বন্ধীয়। আবার কিছু প্রক্রিয়া কেন্দ্রীভূত হয় একটি গল্পকে ঘিরে এবং কিছু তত্ত্ব বা দৃষ্টিকোণ নাট্যকলাকে তুলে ধরে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে। এরিস্টটলের নাট্যতত্ত্ব বিষয়ক সমালোচনামূলক নিবন্ধ “পোয়েটিকস” থেকে মঞ্চনাটকের জন্য ছয়টি অপরিহার্য উপাদান চিহ্নিত করা যায়। এগুলো হলোঃ প্লট (পরিকল্পনা বা রূপরেখা), চরিত্র, আইডিয়া (ভাব বা কল্পনা), ভাষা এবং দৃশ্য বা ঘটনা। নাটক সম্পর্কে স্পেনীয় নাট্যকার Lope de Vega লিখেছেন যে, মঞ্চনাটকের জন্য একজন ব্যক্তির প্রয়োজন “three boards, two actors, and one passion”। এছাড়াও মঞ্চনাটক তত্ত্ববিদ্যায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রুশ অভিনেতা ও মঞ্চনাটক পরিচালক কনস্ট্যান্টিন স্তানিস্লাভস্কি, ফরাসী কবি, অভিনেতা, নাট্যকার ও মঞ্চনাটক পরিচালক অ্যান্টনি আরটড, জার্মান নাট্যকার, কবি ও মঞ্চনাটক পরিচালক বের্টোল্ট ব্রেশ্‌ট, আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও মঞ্চনাটক পরিচালক অরসন ওয়েলস, ইংরেজ ও ফরাসী চলচ্চিত্র পরিচালক, মঞ্চনাটক পরিচালক পিটার ব্রুক এবং পোলিশ মঞ্চনাটক পরিচালক ও পরীক্ষামূলক মঞ্চনাটকের প্রবর্তক জর্জিও গ্রোটভস্কি

কনস্ট্যান্টিন স্তানিস্লাভস্কিকে বিবেচনা করা হয় নাট্যকলা-কৌশলের জনক হিসেবে, যেহেতু তিনিই প্রথম এ বিষয়ে লিখেছিলেন। আধুনিক পশ্চিমা মঞ্চনাটকের অধিকাংশ তত্ত্বই বিভিন্ন রূপে উদ্ভূত হয়েছে স্তানিস্লাভস্কির “পদ্ধতি” থেকে। তবে স্তানিস্লাভস্কির অনেক ছাত্রই তাঁর “পদ্ধতি” প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সৃষ্টি করেছিলেন তাঁদের নিজস্ব রীতি। এই প্রাথমিক নতুন রীতি বা পদ্ধতিই ভবিষ্যৎ তাত্ত্বিকদের পথ আলোকিত করতে সাহায্য করেছে, শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছে, এগিয়ে নিয়ে গেছে বহু বিস্তীর্ণ ও বিচিত্র পদ্ধতির দিকে। অভিনয় পদ্ধতির বহু বিস্তৃত সীমানা জুড়ে থাকা সেই সব রীতি ও পদ্ধতিই আজকের এই সময়ে পঠিত হয় এবং ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলাযায়মাইযনারস্তানিস্লাভস্কিস্ট্রাসবার্গ এবং হ্যাগেন অভিনয় পদ্ধতির কথা।

উইকিপিডিয়া অবলম্বনে

(চলমান)

লেখক পরিচিতি

আরও লেখা

spot_img

সাম্প্রতিক লেখা