বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫

নেল রোজের গল্প’ মাস্কের দৈববাণী’

  • অনুবাদ: ফজল হাসান

এ কাজটি মাস্কই করেছে।

কোনো আবদ্ধ জায়গায় আটকে থাকলে আমি সবসময় আতঙ্কে থাকি। সুতরাং আচম্বিতে মুখোশ পরা লোকজন দেখলে আমার বুকের ভেতর ধুকপুকানী এবং উদ্বেগ বেড়ে যায়।

কেউ কেউ মেডিকেলের সাধারণ মাস্ক পরেছে এবং বাকিরা প্লাস্টিকের মাস্ক পরে মুখমণ্ডলের পুরোটাই ঢেকে রেখেছে। তবে সেসব মাস্কের মধ্যে দেখার জন্য চোখের সামনে ছিদ্র রয়েছে।

ভয়ানক, অস্বস্তিকর এবং রীতিমতো ভয়ঙ্কর।

আমি গভীর শ্বাস নেই এবং চতুর্দিকে তাকাই।

আমি কোন নরকে আছি?

নাকি আমি আদৌ নরকে ছিলাম?

দূরে আগুণের লেলিহান শিখা ভীষণ বেগে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের সঙ্গে পুলিশ গাড়ীর হর্ণ মিলে আমার কানের পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছিল।

কিছু মানুষ দৌঁড়াতে শুরু করে এবং অন্য পথচারীরা বৃত্তের চতুর্দিকে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে।

তাদের চোখে হতাশার চিহ্ন ফুটে আছে এবং তাদের সেই চাহনির দিকে দৃষ্টি পড়তেই আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিম স্রোত নিচে নেমে যায়।

আমি বৃত্তের মতো ঘুরতে থাকি এবং বেপোরোয়া ভাবে খুঁজতে থাকি কোথায় আছি।

কিন্তু কোনো কিছুই আমার কাছে পরিচিত মনে হয় না।

অকস্মাৎ বিরক্তিকর শব্দ এসে আমার কানে আঘাত হানে।

বাড়ি যাও! ঘরের ভেতর থাকো! অবশ্যই এখন তোমাকে রাস্তা ছেড়ে চলে যেতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা থামাতে পারছি না। এক্ষুণি বাড়ি যাও!

উদ্ভ্রান্তের মতো আমি দৌঁড়াতে শুরু করি, কিন্তু জানি না কোথায় যাবো।

তবে আমি জানি, নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমার একটা কিছু অথবা কাউকে খোঁজা দরকার। কিন্তু এত মানুষের আতঙ্কিত মুখ আমার মন অন্য দিকে ধাবিত করতে পারেনি।

প্লাস্টিকের পেছনে তাদের কালো চোখ। তখনো ভয়ে জ্বলজ্বল করছিল।

তারপর আমার মনে পড়ে।

জেনিস, আমার মেয়ে।

আমি কেমন করে ওকে ভুলতে পারি? আমাকে বাড়ি পৌঁছুতে হবে এবং চটজলদি।

কিন্তু আমার পা দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন কোনো কিছুর মধ্য দিয়ে দৌঁড়াচ্ছে।

আমি দৌঁড়াই এবং আরও দ্রুত দৌঁড়াই। ঘন ঘন নিঃশ্বাস টানি এবং রীতিমত হাঁপাতে থাকি।

আমাকে বাড়ি যেতে দাও… আমাকে…

আচমকা আমি থমকে দাঁড়াই। ভীষণ গরমে ঘেমে গেছি। কপাল থেকে ঘামের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে।

শোবার ঘরের দরজার পাল্লা খোলার শব্দে আমি দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠি। সেখানে দাঁড়িয়ে আমার মেয়ে জেনিস চিৎকার করছে, ‘বাবা, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। সময় মতো আমাকে স্কুলে পৌঁছুতে হবে।’

‘আসছি!’

দরজা বন্ধ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমি উপলব্ধি করলাম যে, এইমাত্র যা অনুভব করেছি তা আসলে এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন।

কেবল স্বপ্ন মাত্র। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

আমি উঠে বাথরুমে ঢুকি, শাওয়ার চালু করি এবং চটজলদি গোসল করি। বাইরে বেরিয়ে এসে টিভির রিমোট হাতে নিই।

‘সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সম্ভবত এটা অতিমারির আকার ধারণ করবে। আমাদের অবশ্যই…’

আমি স্থির হয়ে যাই। তারপর একসময় কাঁপতে আরম্ভ করি।



লেখক পরিচিতি: বৃটিশ লেখিকা নেল রোজের পুরো নাম নেল রোজ লভরিজ। ইতোমধ্যে তার তিনটি উপন্যাস এবং তিন শ’-এর অধিক রচনা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা, পুনর্জন্ম, দেবদূত, আত্মা জগৎ, বংশ, ভীতিকর কাহিনি এবং স্বাস্থ্য। ‘জিপসিজ: আই ম্যারিড অ্যা রোমানি!: অনেষ্ট, র‌্য অ্যান্ড এক্সট্রেমলি ফানি (প্রকাশিত: ২০১৭) এবং ‘জিপসিজ ২: গোয়িং অ্যা বিট ডিনলো’ (প্রকাশিত: ২০২০) তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। বর্তমানে তিনি লন্ডনে বসবাস করেন।

লেখক পরিচিতি

আরও লেখা

spot_img

সাম্প্রতিক লেখা